বাংলাদেশে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা

একাদশ- দ্বাদশ শ্রেণি - পরিসংখ্যান - পরিসংখ্যান ১ম পত্র | | NCTB BOOK

বাংলাদেশে প্রকাশিত পরিসংখ্যানের সীমাবদ্ধতা

বাংলাদেশে প্রকাশিত পরিসংখ্যান অর্থনৈতিক, সামাজিক, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে এগুলোর মান এবং ব্যবহারযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এসব সীমাবদ্ধতা পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে।


১. তথ্য সংগ্রহের ত্রুটি

  • তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি অনেক সময় সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না।
  • মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের মান কম, বিশেষত গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
  • সঠিক নমুনা নির্বাচন বা পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহের অভাব দেখা যায়।

২. অধিকাংশ তথ্য অপর্যাপ্ত এবং অসম্পূর্ণ

  • অনেক ক্ষেত্রেই তথ্য অপর্যাপ্ত বা অসম্পূর্ণ থাকে।
  • তথ্য সংগ্রহের সময়সীমা বা পদ্ধতি অনিয়মিত হওয়ায় ডেটার আপডেটেড অবস্থা নিশ্চিত করা কঠিন।

৩. সঠিকতা এবং নির্ভুলতার অভাব

  • পরিসংখ্যানের সঠিকতা এবং নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
  • সরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার দেওয়া তথ্য বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না-ও হতে পারে।

৪. প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা

  • উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণ করার অভাব রয়েছে।
  • তথ্য সংরক্ষণ এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার বা দক্ষতা অনেক ক্ষেত্রে অনুপস্থিত।

৫. স্বচ্ছতার অভাব

  • অনেক সময় সরকারি পরিসংখ্যান স্বচ্ছ হয় না এবং পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • রাজনৈতিক চাপ বা অন্য প্রভাবের কারণে তথ্য প্রকাশে হেরফের হতে পারে।

৬. প্রশিক্ষণের অভাব

  • পরিসংখ্যান সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের কাজে নিযুক্ত কর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না থাকায় তথ্যের মান কমে যায়।
  • পরিসংখ্যানিক পদ্ধতির যথাযথ ব্যবহার না করার ফলে ত্রুটিপূর্ণ ডেটা পাওয়া যায়।

৭. সময়মতো তথ্য প্রকাশের অভাব

  • সময়মতো তথ্য প্রকাশ না হওয়ায় এটি অনেক সময় পুরনো হয়ে যায়।
  • তথ্য প্রকাশের বিলম্ব নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে।

৮. বহিরাগত তথ্যের সাথে তুলনা কঠিন

  • আন্তর্জাতিক মান অনুসারে তথ্য সংগ্রহ এবং উপস্থাপনের অভাবে এটি অন্য দেশের ডেটার সাথে তুলনা করা কঠিন।

৯. ব্যয় ও বাজেটের সীমাবদ্ধতা

  • পরিসংখ্যান সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং প্রকাশের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট ও অর্থায়নের অভাব থাকে।
  • সীমিত বাজেটের কারণে উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না।

১০. সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রভাব

  • কিছু তথ্য সংগ্রহে সামাজিক বা সাংস্কৃতিক বাধা রয়েছে, যেমন ব্যক্তিগত আয়ের তথ্য প্রদান করতে অনীহা।
  • লিঙ্গভিত্তিক তথ্য সংগ্রহেও অনেক সময় অসুবিধা দেখা দেয়।

সারসংক্ষেপ

বাংলাদেশে প্রকাশিত পরিসংখ্যান নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং প্রকাশের সীমাবদ্ধতার কারণে এর মান ও গ্রহণযোগ্যতা অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। সঠিক প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি, এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই সীমাবদ্ধতাগুলো দূর করা সম্ভব।

Content added By
Promotion